আসসালামু আলাইকুম! ক্রিপ্টো জানালা থেকে আমি ইয়াসির আরাফাত ইমন বলছি আর আজকে আমি আলোচনা করবো বর্তমান বিশ্বের সর্বাধিক আলোচিত ও রহস্যময় এক ডিজিটাল প্রযুক্তি নিয়ে —
দ্যা ক্রিপ্টোকারেন্সি।
ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে অনেকের ধারণা না থাকলেও বিটকয়েন শব্দটি কখনো শুনেননি এমন মানুষ খুঁজলে খুব কমই পাওয়া যাবে। কিন্তু বিটকয়েন আসলে কি? কেন এই প্রযুক্তি নিয়ে এত আলোচনা, সমালোচনা! কিভাবে কাজ করে এই ডিজিটাল প্রযুক্তি বিস্তারিত থাকছে এই পর্বে!
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি?
Cryptography শব্দ থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি শব্দটির উৎপত্তি। Crypto শব্দের অর্থ হচ্ছে গোপন তথ্য পাঠানোর বিজ্ঞান। আর Currency শব্দের অর্থ হলো মুদ্রা। Cryptocurrency অর্থ — ক্রিপ্টোগ্রাফি দ্বারা সুরক্ষিত ডিজিটাল মুদ্রা। সহজ ভাষায় বললে, ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো এক ধরনের ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা যা নিরাপদ, বিকেন্দ্রীভূত অর্থাৎ কোন ব্যক্তি বা নির্দিষ্ট কোন রাষ্ট্র এবং এর সরকারের আওতাধীন নয় (decentralized) এবং ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত। এর মাধ্যমেও লেনদেন করা যায় ঠিক যেমন দৈনন্দিন জীবনে আমরা টাকা দিয়ে করি। কিন্তু, এটি কাগজের তৈরি কোন মুদ্রা নয়, বরং একেবারেই ইন্টারনেট ভিত্তিক। আপনি জানবেন আপনার কাছে এত টাকা আছে, কিন্তু আপনি সেগুলোকে ধরতে পারবেন না, ছুঁইতে পারবেন না।
বিটকয়েন কি এবং এর সূচনাঃ
বিটকয়েন (সংক্ষেপে btc) হলো ক্রিপ্টো ভিত্তিক প্রথম ডিজিটাল মুদ্রা যা ২০০৮ সালের অক্টোবর মাসে পরিচিতি লাভ করে। Satoshi Nakamoto (মুখোশধারী) নামের একজন বা একটি দল একটি গবেষণাপত্র (Whitepaper) প্রকাশ করেন, যার শিরোনাম ছিলো —
“Bitcoin: A Peer-to-Peer Electronic Cash System”
(অর্থাৎ, এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির মধ্যে সরাসরি ডিজিটাল টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা)
এই গবেষণাপত্রে এমন একটি ডিজিটাল কারেন্সির ধারণা দেওয়া হয়, যা কোন ব্যাংক বা তৃতীয় পক্ষের অনুমতি ছাড়াই দৃষ্টির অগোচরে এক ব্যক্তি হতে অন্য ব্যক্তির মধ্যে সহজেই লেনদেন করা যায় যা নিরাপদ ও কম খরচ সাপেক্ষ ব্যবস্থা। বিটকয়েনের সংখ্যা নির্দিষ্ট এবং নির্ধারিত - ২১ মিলিয়ন।
কে এই Satoshi Nakamoto?
Satoshi Nakamoto হলেন সেই ব্যক্তি বা গোষ্ঠী যিনি বা যারা বিটকয়েন তৈরি করেন। তবে ইন্টারনেট জগতে তিনি বা তারা কখনোই তাদের আসল পরিচয় প্রকাশ করেননি। তিনি ইমেইল এবং অনালাইন ফোরামে লিখতেন, কিন্তু কখনোই নিজের ছবি, নাম বা ব্যক্তিগত কোন তথ্যই দেননি। আজও কেউ জানেনা তিনি কোন ব্যক্তি না একদল ডেভেলপার। ২০০৯ সালের ৩রা জানুয়ারি, তিনি Genesis Block (প্রথম বিটকয়েন ব্লক) তৈরি করেন। তখন থেকেই বিটকয়েনের ব্লকচেইন যাত্রা শুরু করে। পর্দার আড়ালে থেকেই মানবজাতিকে তিনি তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ প্রযুক্তি উপহার দিয়েছেন। হয়তো কোন একদিন, শেষ বয়সে তিনি বা তারা তাদের রহস্যে ঘেরা পরিচয় মানবজাতির সামনে প্রকাশ করবেন।
মুদ্রার নাম ও পরিচয়ঃ
বিটকয়েন (Bitcoin) ছিল বিশ্বের প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি, যেটা ২০০৯ সালে চালু হয়। এরপর ধীরে ধীরে অনেক নতুন ডিজিটাল মুদ্রা লঞ্চ করা হয়, যাদেরকে বলা হয় "Altcoins" (Alternative Coins)। বিটকয়েনের জনপ্রিয়তা দিনকে দিন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ডেভেলপার ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব ক্রিপ্টো বা মুদ্রা অনলাইন জগতে নিয়ে আসা শুরু করে। ২০২৫ এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ২৫,০০০-এর বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে। নিচে জনপ্রিয় কিছু ক্রিপ্টো কারেন্সির তালিকা প্রকাশ করা হলো —
👉 বিটকয়েনের সহজতর সংস্করণ। লেনদেন দ্রুত এবং ফি কম।
👉 একটি ডোমেইন নেম সিস্টেমের (DNS) বিকেন্দ্রীভূত বিকল্প তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়।
👉 দ্রুত আন্তর্জাতিক লেনদেনের জন্য বানানো। এটি ব্যাংকগুলোর মধ্যে অর্থ পাঠানোর জন্য ব্যবহৃত হয়।
👉 মজার (meme-based) মুদ্রা হিসেবেই শুরু হয়েছিল, কিন্তু পরে অনেক জনপ্রিয় হয়।
👉 এটি শুধু মুদ্রা নয়, বরং স্মার্ট কন্ট্রাক্ট চালাতে সক্ষম একটি প্ল্যাটফর্ম। এটি বিটকয়েনের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্রিপ্টো প্রজেক্ট।
তাছাড়া আরও কিছু জনপ্রিয় মুদ্রাগুলো হলো যথাক্রমে —
- Dash (ড্যাশ) – ২০১৪
- Monero (XMR) – ২০১৪
- Cardano (ADA) – ২০১৭
- Polkadot (DOT) – ২০২০
- Solana (SOL) – ২০২০
সারাংশঃ বিটকয়েনের পথ ধরেই হাজার হাজার নতুন ডিজিটাল মুদ্রা তৈরি হয়েছে। তবে তাদের মধ্যে কিছু প্রকল্পই সময়ের পরীক্ষায় টিকে থেকে নিজেকে "বিশ্বস্ত ও কার্যকর" হিসেবে প্রমাণ করতে পেরেছে। অধিকাংশই আজ ধূলিকণার ন্যায় ইন্টারনেটের তলানিতে জমা হয়েছে এবং হচ্ছেও। মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলতে অনেক ডেভেলপার ফেইক টোকেন (ক্রিপ্টো বা মুদ্রা) তৈরি করে সকল গচ্ছিত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। তাই, আমাদের সকলের উচিত অনেক যাছায় বাছায় করে অরিজিনাল মুদ্রা ক্রয় করা। জনপ্রিয় কিছু ক্রিপ্টোকারেন্সির বর্তমান মূল্য দেখতে চাইলে এখানে
ক্লিক করুন। আজকে এই পর্যন্তই। পরের পর্বে আবার অন্য কোন টপিক নিয়ে আলোচনা হবে। সে পর্যন্ত সবাই সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। আল্লাহ হাফেজ!